বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা/class nine -ten
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারণা ইতিহাস' শব্দটির উৎপত্তি
ইতিহ' শব্দ থেকে যার অর্থ ‘ঐতিহ্য। ঐতিহ্য হচ্ছে
অতীতের অভ্যাস, শিক্ষা, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি
যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই ঐতিহ্যকে
এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে
দেয় ইতিহাস। ই, এইচ, কার-এর ভাষায় বলা যায়,
ইতিহাস হলাে বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন
সংলাপ। বর্তমানের সকল বিষয়ই অতীতের ক্রমবিবর্তন
ও অতীত ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
আর অতীতের ক্রমবিবর্তন ও ঐতিহ্যের বস্তুনিষ্ঠ
বিবরণই হলাে ইতিহাস। তবে এখন বর্তমান সময়েরও
ইতিহাস লেখা হয়, যাকে বলে সাম্প্রতিক ইতিহাস।
সুতরাং ইতিহাসের পরিসর সুদূর অতীত থেকে বর্তমান
পর্যন্ত বিস্তৃত। ইতিহাস শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে
এরূপ দাঁড়ায়, ইতিহ + আস। যার অর্থ এমনই ছিল বা
এরূপ ঘটেছিল। ঐতিহাসিক ড, জনসনও ঘটে যাওয়া
ঘটনাকেই ইতিহাস বলেছেন। তার মতে, যা কিছু ঘটে
তাই ইতিহাস। যা ঘটে না তা ইতিহাস নয়।।
গ্রিক শব্দ ‘হিস্টরিয়া’ (Historia) থেকে ইংরেজি
হিস্টরি (History) শব্দটির উৎপত্তি, যার বাংলা
প্রতিশব্দ হচ্ছে ইতিহাস। হিস্টরিয়া’ শব্দটির
প্রথম ব্যবহার করেন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরােডােটাস
(খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতক)। তিনি ইতিহাসের জনক হিসেবে
খ্যাত। তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর গবেষণাকর্মের নামকরণে
এ শব্দটি ব্যবহার করেন, যার আভিধানিক অর্থ হলাে
সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। তিনি বিশ্বাস করতেন, ইতিহাস
হলাে- যা সত্যিকার অর্থে ছিল বা সংঘটিত হয়েছিল তা অনুসন্ধান
করা ও লেখা। তিনি তাঁর গবেষণায় গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে সংঘটিত
যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করেছেন। এতে তিনি প্রাপ্ত তথ্য,
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং গ্রিসের বিজয়গাথা লিপিবদ্ধ করেছেন।
যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এ ঘটনা ভুলে না যায়, এ বিবরণ যেন তাদের
উৎসাহিত করে। হেরােডােটাস এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।
হেরােডােটাসই প্রথম ইতিহাস এবং অনুসন্ধান- এ দুটি ধারণাকে
সংযুক্ত করেন। ফলে ইতিহাস পরিণত হয় বিজ্ঞানে, পরিপূর্ণভাবে
হয়ে ওঠে তথ্যনির্ভর এবং গবেষণার বিষয়ে। প্রকৃতপক্ষে মানব
সমাজের অনন্ত ঘটনাপ্রবাহই হলাে ইতিহাস। ইতিহাসবিদ
র্যাপসন বলেছেন, ইতিহাস হলাে ঘটনার বৈজ্ঞানিক এবং
ধারাবাহিক বর্ণনা। আধুনিক ইতিহাসের জনক জার্মান
ঐতিহাসিক লিওপােন্ড ফন ব্যাংকে মনে। করেন, প্রকৃতপক্ষে
যা ঘটেছিল তার অনুসন্ধান ও তার সত্য বিবরণই ইতিহাস।
সুতরাং ইতিহাস হচ্ছে মানব সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত
বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিক ও সত্যনিষ্ঠ বিবরণ। সঠিক ইতিহাস
সবসময় সত্যকে নির্ভর করে রচিত। ইতিহাসের উপাদান যেসব
তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা
সম্ভব, তাকেই ইতিহাসের উপাদান বলা হয়। ইতিহাসের উপাদানকে
আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা : লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান।
১, লিখিত উপাদান:
ইতিহাস রচনার লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য,
বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র
ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যকর্মেও
তৎকালীন সময়ের কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
যেমন: বেদ, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র', কলহনের ‘
রাজতরঙ্গিনী, মিনহাজ-উস-সিরাজের 'কাঙ্ক-ই-নাসিরী', আবুল
ফজল-এর ‘আইন-ই-আকবরী’ ইত্যাদি।
বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ সব সময়ই ইতিহাসের
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়েছে।
যেমন- পঞ্চম থেকে সম শতকে বাংলায় আগত
চৈনিক পরিব্রাজক যথাক্রমে ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং
ও ইংসিং-এর বর্ণনা। পরবঙ্গী সময়ে আফ্রিকান
পরিব্রাজক ইবনে বতুতাসহ অন্যদের লেখাতেও
এ অঞ্চল সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া গিয়েছে।
এসব বর্ণনা থেকে তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি,
রাজনীতি, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে অনেক
তথ্য জানা যায়। সাহিত্য উপাদানের মধ্যে আরও
রয়েছে রূপকথা, কিংবদন্তি, .. গল্পকাহিনি। তিব্বতীয়
লেখক লামা ভারনাথের বর্ণনায় পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা
পােপালের সিংহাসন আরােহণ সম্পর্কে যে বর্ণনা আছে,
সেটি একধরনের কল্পকাহিনি। তবে অনেক কাহিনিয়।
আড়ালে অনেক সত্য ঘটনা থেকে যায় বা ঐতিহাসিকরা
বিচারবিশ্লেষণ অনুসন্ধান করে আবিষ্কার করেন। তাছাড়া
সরকারি নথি, 3gp আমি এ p) চিঠিপত্র
ইত্যাদি থেকেও নির্ভবােগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
২. অলিখিত বা এ উপাদান :
যেসব বস্তু বা উপাদাল।
থেকে আমরা বিশেষ সময়, স্থান বা ব্যক্তি
সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাই,
সেই বস্তু বা উপাদানই
প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। প্রত্নত্ব নিদর্শনসমূহ মূলত
অলিখিত উপাদান। যেমন : মুদ্রা, শিলালিপি,
অলিপি, তাম্রলিপি, ইমরক্ত ইত্যাদি। এ সমস্ত
প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং
বিশ্লেষণের ফলে সে সময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক,
সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ধারণা করা সম্ভব প্রাচীন অধিবাসীদের সভ্যতা, ধর্ম, জীবনযাত্রা,
নগরায়ণ,
নাৰীৰটোৱে প্ৰাপ্ত নিদর্শন নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র, ব্যবসা
বাণিজ্যের অবস্থা, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে। উদাহরণ
হিসেবে উল্লেখ করা যায় সিন্ধু সভ্যতা, বাংলাদেশের মহাস্থানগড়,
পাহাড়পুর, ময়নামতি ইত্যাদি স্থানের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের কথা।
নতুন নতুন প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে পারে একটি জারি
ইতিহাস। যেমন- সম্প্রতি নরসিংদীর উন্নারী-বটেশলের প্রত্নতত্ত্ব আবিষ্কার।
ঐ অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনে প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশে আড়াই
হাজার বছর পূর্বেও নগর সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। এই আবিষ্কারের
ফলে বাংলার প্রাচীন সভ্যতার নবদিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।
বদলে যাচ্ছে বাংলার প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে অনেক ধারণা।
অদূর ভবিষ্যতে নতুন ভাবে লিখতে হবে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস।
Vai kicu question solve dile valo hoy
Nice