সুন্দর করে কথা বলার সহজ কৌশল
সুন্দর করে কথা বলতে না পারার কারণে অনেক সময় পিছিয়ে পড়তে হয় জীবনে। সুন্দর করে কথা বলা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। শুধু অনুশীলনের ব্যাপার। আর একটু নিয়মিত অনুশীলন আপনার জীবনকে দিতে পারে নতুন মোড়। সুন্দর করে কথা বলা সবই আপনার নিজের হাতে, তারপর নিজের চেষ্টা, কিছু নির্দেশনা মেনে চললে, সুন্দর করে কথা বলা সহজ হয়ে যাবে একবার!
সুন্দর করে কথা বলার কিছু টিপস বা কৌশলঃ
শরীর ও মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা শিখুনঃ হাসিমুখে কথা বলা শিখুন আর শরীরী ভাষার দিকে নজর দিন। কথা বলার সময় হাত কোথায় রাখছেন, ঘাড় কতটুকু বাঁকাচ্ছেন কিংবা ভ্রু কতটুকু ব্যবহার করছেন—সবটাই খেয়াল রাখুন। চোখে চোখ রেখে কথা বলা শিখুন। যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর দিকে না তাকিয়ে কথা বলা অসম্মান ও অভদ্রতা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরী ভাষা সংশোধনে সময় নিন। টানা পাঁচ সপ্তাহ এমন চেষ্টা করুন, নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখবেন।
আঞ্চলিকতার টান পরিহার করা শিখুনঃ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পেশাদারি যেকোনো কাজে বাংলা ভাষায় সুন্দর করে কথা বলতে নিজের আঞ্চলিকতা পরিহারের চেষ্টা করুন। শুরুতে হয়তো সমস্যা হবে, কিন্তু আঞ্চলিকতা অবশ্যই পরিহার করা যায়। টানা ছয়-সাত সপ্তাহ সময় দিলে আঞ্চলিক টান কথায় কমিয়ে আনতে পারবেন। ইংরেজিতে কথা বলার সময় পরিষ্কারভাবে ব্রিটিশ কিংবা আমেরিকান উচ্চারণ অনুসরণ করুন। কথার মধ্যে কখন, কীভাবে, কতটুকু বিরতি নিতে হয়, তা নিজেই উপলব্ধি করুন।
বুঝে কথা বলুন, শ্রোতাকেও বুঝুনঃ কথা বলার সময় মুখ আর মস্তিষ্কের মধ্যে সমন্বয় আনার চেষ্টা করুন। কথা শুরুর আগে কী বলবেন, তা গুছিয়ে নিন, প্রয়োজনে টুকরো কাগজে লিখে নিন। আপনি যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি কথা বুঝতে পারছেন কি না, সেদিকে মনোযোগ দিন। আপনি কী বলছেন, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার শ্রোতা কী শুনছেন বা কী বুঝছেন। আপনার কথায় আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। শ্রোতার মুখ ও শরীরের অভিব্যক্তি দেখে শ্রোতাকে বুঝতে চেষ্টা করুন।
জটিল বাক্য ও নেতিবাচক কথা পরিহার করুনঃ যাঁরা গুছিয়ে কথা বলেন, তাঁরা আসলে কম শব্দে খুব বেশি কাজের কথা বলেন। কথা বলার সময় জটিল বাক্য ব্যবহার করবেন না। শব্দভান্ডার কিংবা বিদ্যার দৌড় কখনোই কথার মধ্যে প্রকাশের চেষ্টা করবেন না। সরল ও সাধারণ শব্দ ও বাক্যে কথা বলার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখবেন, কথা বলার সময় অন্য কারও নামে নেতিবাচক বাক্য কিংবা শব্দ কোনোভাবেই বলবেন না। নেতিবাচক বাক্য ব্যবহারে আসলে নিজের দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। সমালোচনা করতে হলে যৌক্তিকভাবে করুন। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন।
অন্যকে অনুসরণ করুন, শিখুনঃ সুন্দর করে কথা বলার শিল্প রপ্ত করতে টেড–এর বিভিন্ন ভিডিওসহ হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ কিংবা ব্লুমবার্গ বিজনেস ম্যাগাজিনের বিভিন্ন ভিডিও দেখুন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাইভ ভিডিও লেকচার দিয়ে থাকেন, সেগুলো দেখুন। ভিডিও থেকে তাঁদের মতো করে কথা বলা, বাক্য ব্যবহার আর শব্দ প্রয়োগ আয়ত্ত করুন। আপনি পেশাজীবনে যাঁর মতো হতে চান, তাঁকে অনুসরণ করতে পারেন।
বিরতি দিয়ে কথা বলুন : কথা বলার সময় একটু বিরতি দিয়ে কথা বললে শ্রোতাদের বুঝতে সুবিধা হয়। বেশি তাড়াতাড়ি কথা বলা খুব বাজে একটি অভ্যাস। এতে শ্রোতাদেরও বুঝতে কষ্ট হয়। বিরতি দিয়ে কথা বললে মূল বিষয়ের ওপর গুরুত্বও দেয়া যায়। অন্যদিকে ধীরগতিতে কথা বললে শ্রোতারা বিরক্তবোধ করে এবং শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, মধ্যবর্তী একটি মাপ বেছে কথা বললে শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া যায়। কথা বলার সময় গুরুত্ব অনুযায়ী কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করা যেতে পারে।
বিভিন্ন রকম বই পড়ুন : জ্ঞান অর্জনে বইয়ের বিকল্প নেই। উচ্চারণ শুদ্ধ করতে বইয়ের কঠিন শব্দগুলো জোরে জোরে পড়ে অনুশীলন করা যেতে পারে।
আপনি কেবল একটি সুযোগই পাবেন প্রথম দেখাতেই কোথাও নিজেকে স্মার্ট হিসেবে প্রমাণ করার। যাকে এক কথায় বলে “first impression”। আপনি যদি কোথাও প্রবেশ করার শুরুতেই এলোমেলো বা হেলেদুলে প্রবেশ করেন তবে আপনি প্রথমে সবার চোখে যে আনস্মার্ট বা তথাকথিত খ্যাত হিসেবে প্রতীয়মান হবেন সেটি সম্ভবত আর কখনোই কাটিয়ে উঠতে পারবেন না আর যদি কাটিয়ে উঠতে চানও তবে আপনাকে এক কথায় অসাধ্য সাধন করতে হবে। তাই অন্যের সামনে নিজেকে স্মার্টলি প্রকাশ করা সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকা খুব দরকারি।
যেভাবে নিজেকে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরবেনঃ
নিজেকে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরার প্রথম শর্ত হল যখনই আপনি হাঁটবেন কোন দিকে বেশী হেলে অথবা খুব বেশী দুলে দুলে না হেঁটে সোজা হয়ে হাঁটুন। পিঠ ও ঘাড় টান টান রেখে দৃষ্টি সামনে প্রসারিত করুন। আপনার হাঁটার ধরণ আপনার আত্মবিশ্বাস ও আপনার স্মার্টনেস প্রকাশ করবে।
নিজেকে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরার আরো একটি ভালো মাধ্যম হলো আপনার বাচনভঙ্গী। কথা বলার সময় জড়িয়ে কথা বলা বর্জন করুন, খুব দ্রুত কথা না বলে প্রতিটি কথার মাঝখানে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখুন, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করুন, কথায় কথায় ইংরেজি না বলে সীমিত কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
স্মার্ট হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে সব কথার মধ্যে কথা বলতে যাবেন না। বিশেষ করে যে বিষয়ে আপনার কোন ধারণা নেই সেসব আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে অজানা বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। আরও পড়ুন
মুখটা খুব বেশী গম্ভীর বা ভাব গাম্ভীর্যে ভরপুর না রেখে মুখে আলতো একটি হাসি রাখুন, এটি আপনার বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের প্রকাশ ঘটাবে। যদি কখনো অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হন তাহলে কিম্ভূতকিমাকার না হয়ে মৃদু হেসে পরিস্থিতি সামাল দিন। আপনার স্মার্টনেস প্রকাশের এইটি আরো একটি মাধ্যম।
নিজেকে স্মার্ট করতে গিয়ে আপনি যা নন তা করবেন না। নিজের আসল সত্ত্বাকে উপেক্ষা করবেন না, মনে রাখবেন মেকি কোন কিছুই দীর্ঘস্থায়ী হয়না। তাই আপনি যা সেভাবেই নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে স্মার্ট করে উপস্থাপন করুন।
নিজেকে স্মার্ট করে তুলতে যত বেশি পারেন স্মার্ট লোকজনের সাথে মেলামেশা করুন। স্মার্টনেস মানে এই নয় আপনি স্বয়ংসম্পূর্ণ, প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিন আর অন্যের প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
পোস্ট ট্যাগ
সুন্দর করে কথা বলার সহজ কৌশল,অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলার কৌশল,সুন্দর করে কথা বলার বই pdf,কম কথা বলার কৌশল,মিটিং এ কথা বলার কৌশল,চালাকি করে কথা বলার উপায়,জোরে কথা বলার কৌশল,কথা বলার জন্য ।