আযানের জবাব কীভাবে দিতে হয় এবং এর ফজিলত
সম্মানিত দ্বীনি ভাই, পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর ধ্বনির নাম আযান, যা মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে কোটি মানুষের উপলব্ধি। ইসলামে আযানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং আযান শুনে আযানের জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
👉 আযানের উত্তর দেবার দুটো পদ্ধতি রয়েছে।
প্রথমতঃ- জবানের মাধ্যমে আযানের জবাব দেওয়া, এটা সুন্নাত।
দ্বিতীয়তঃ- কর্মের মাধ্যমে জবাব দেওয়া, অর্থাৎ সশরিরে উপস্থিত হয়ে জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করা, এটা ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক।
👉 জবানের মাধ্যমে আযানের জবাব দেওয়ার সহিহ পদ্ধতিঃ-
মুয়াজ্জিন প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর শ্রোতা ওই বাক্যটি নিজেও অনুরূপভাবে বলবে। কিন্তু মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় শ্রোতা ‘লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে। এটাই বিশুদ্ধ অভিমত।(মুসলিম, হাদিস : ৩৮৫)
তবে অনেক বর্ণনায় ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময়ও অনুরূপ বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।(কিতাবুদ দোয়া, তাবারানি, হাদিস : ৪৫৮)"
👉 প্রচলিত ভুলঃ-
অনেকেই আযানের সময় জবাব দিতে গিয়ে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’-এর জবাবে 'সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলে থাকে। এটি ঠিক নয়। কেননা এ সময় দরুদ পড়ার নির্দেশ নেই। বরং তখনো মুয়াজ্জিনের অনুরূপ ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলাই সুন্নত। (আলবাহরুর রায়েক : ১/২৭৩, আহসানুল ফাতাওয়া : ২/২৭৮)। এই দরুদ পাঠ করতে হবে আযান শেষ হওয়ার পরে।
যেহেতু মৌখিকভাবে আযানের জবাব দেওয়া সুন্নাত এবং অনেক ফজিলতপূর্ন একটা কাজ সেহেতু আযানের জবাব না দিলে এই সুন্নাতটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমরা অনেক সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে যাই। কথার মাধ্যমে আযানের জবাব দেওয়ায় এই আমলটা পূরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলেই করতে পারেন। এমনকি এর জন্য ওযু গোসল কোন কিছুই করতে হয়না। তাই আমরা কর্মের মাধ্যমে আযানের জবাব দেওয়ার সাথে সাথে মৌখিকভাবেও আযানের জবাব দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলব।
যারা আজানের জবাব দেবে না :
নামাজ আদায়কারী, পানাহার অবস্থায়, ইস্তিঞ্জাকারী, স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত, মহিলাদের ঋতুকালীন ইত্যাদি সময়। তবে অনেক আলেমের মতে আজানের পরক্ষণেই যদি উল্লিখিত কাজ থেকে অবসর হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আজানের জবাব দিয়ে দেওয়া উত্তম। কোরআন তিলাওয়াতকারী তিলাওয়াত সাময়িক বন্ধ রেখে আজানের জবাব দেওয়া উত্তম। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৩৯৭)
আজানের সময় দুনিয়াবি কথা ও কাজে লিপ্ত থাকা :
আজানের সময় চুপ থাকা সুন্নত। একান্ত প্রয়োজন না হলে সাধারণ দ্বিনি ও দুনিয়াবি কথা বা কাজে লিপ্ত থাকা অনুচিত। সাধারণ বক্তৃতা বা সেমিনার চলাকালে আজান হলে সাময়িক তা স্থগিত রাখবে। ওয়াজ বা কোনো দ্বিনি মাহফিল চলাকালেও তা সাময়িক বন্ধ রেখে সবাইকে আজানের জবাব দেওয়া উত্তম। মনে রাখতে হবে, একজন আজানের জবাব দিলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায় না। কেননা আজানের জবাব দেওয়া শ্রবণকারী সব মুসলমানের জন্য সুন্নত। আর আজানের জবাব দেওয়া সুন্নতে কেফায়া নয়। (ফাতহুল কাদির : ১/২৪৮, রদ্দুল মুহতার : ১/৩৯৯, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৫/৪২৭)
রেডিও-টেলিভিশনের আজানের জবাব :
মুয়াজ্জিনের আজান রেডিও-টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হলে তার জবাব দেওয়া সুন্নত। রেকর্ডিংয়ের হলে তার জবাব দেওয়া সুন্নত নয়। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/৬৪৬, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ১/১৭০)
আজানের পর দোয়া :
আজানের পর দরুদ শরিফ ও দোয়া পাঠ করা সুন্নত। হাদিস শরিফে এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আজানের পর ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ...’ এটি পাঠ করবে, তার জন্য আখিরাতে আমি অবশ্যই সুপারিশ করবো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৪)
আজানের পর হাত তুলে মোনাজাত :
আজানের পর দরুদ শরিফ পড়া এবং এর পরে একটি বিশেষ দোয়া পড়ার কথা হাদিস শরিফে রয়েছে, তবে আমাদের মধ্যে প্রচলিত আজানরে পর হাত তুলে দোয়া পড়া ও মোনাজাত করার নিয়ম চালু রয়েছে এই কথা হাদিসে নেই।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে আযানের জবাব দেওয়ার তৌফিক দান করুক, আমিন। পুরো লিখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।