একজন সফল ও আদর্শ ছাত্রের কর্তব্য
একজন সফল ও আদর্শ ছাত্রের কর্তব্য
তুমি যদি চাও যে, তুমি একজন আদর্শ ও সফল কৃতিছাত্র হবে, তাহলে নিমােক্তের উপদেশমালা গ্রহণ কর ঃ
(১) লক্ষ্য স্থির কর।
কি উদ্দেশ্যে লিখাপড়া করবে?
যদি কোন শিক্ষার্থী পড়ার জীবনে অর্থের চিন্তা করে এবং একটি ছােট্ট চাকরি পেলেই তার পড়াশােনা ছেড়ে দেবে বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তার পড়াশােন আর হবে না। অর্থের চিন্তা-ভাবনা ও টাকা-পয়সা অর্জনের লােভই তার পড়াশােনার ইমেজ নষ্ট করে ফেলবে। এভাবে ছাত্র জীবনে যারাই অর্থের লােভে পড়বে এবং লােভকে সংবরণ করতে না পারবে, তাদের মানসিক টেনশন বৃদ্ধি পাবে, আর তাতে অধ্যয়নে চরম ব্যাঘাত ঘটবে এবং স্মরণশক্তির মারাত্মক ক্ষতি হবে। কেননা,
Greed begins sin, sin begins death.
অর্থাৎ লােভে পাপ, পাপেই মৃত্যু।
অতএব প্রত্যেক ছাত্রকে লােভ-লালসা, বাসনা-কামনা প্রভৃতি পার্থিব বিষয়াবলী থেকে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ছাত্র জীবন অর্থ ব্যয়ের জীবন এবং জ্ঞান অর্জনের সময়। তাকে অর্থ ব্যয় করে জ্ঞান অর্জন করতেই হবে এবং এ ব্যাপারে কার্পণ্য করা ঠিক নয়। তবে যারা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল তাদেরকে অবশ্যই হিস বিশেষ করে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান তথা দ্বীন শিক্ষার ক্ষেত্রে ইখলাস রাখা জরুরী। যেহেতু প্রিয় নবী ঐক্ত বলেন, “যে ব্যক্তি এমন শিক্ষা করে যার দ্বারা সে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান করতে পারে, কিন্তু সেই শিক্ষা কেবলমাত্র পার্থিব কোন সম্পদলাভের আশায় শিখতে রত হয়, তবে কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।” (আহমাদ ২/৩৩৮, আবু দাউদ ৪/৭১)
কর্মজীবনে কিছু একটা করতেই হবে। আর তাতে নিয়ত যেন নিছক দুনিয়াদারি না হয়। বরং জ্ঞান শিক্ষার প্রধান নিয়ত ও উদ্দেশ্য যেন এই থাকে যে, সে এর মাধ্যমে নিজের জীবন থেকে মূখতার অন্ধকার দূর করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে, তার দ্বীনের খিদমত করবে, দেশ ও জাতির সেবা করবে। অতঃপর চাকরি করা বা না করা যেন গৌণ বিষয় হয়। মুখ্য বা মূল উদ্দেশ্য যেন অর্থোপার্জন না হয়।
(২) মনছবি তৈরী কর।
মানুষের মস্তিষ্ক সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর এক আজব সৃষ্টি। এর নকল আবিষ্কার হল কম্পিউটার। কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ক সর্বাধুনিক কম্পিউটার অপেক্ষা কমপক্ষে ১০ লক্ষ গুণ বেশী ক্ষমতাসম্পন্ন! বর্তমানে একটি কম্পিউটারের দাম যদি ৫০ হাজার টাকা হয়, তাহলে মানুষের ব্রেনকম্পিউটারের দাম হচ্ছে কমপক্ষে ৫০০০ কোটি টাকা! এত বড় একটি মহামূল্যবান সম্পদ মানুষ মাথায় করে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় অথচ সে অভিযােগ করে যে সে গরীব। আসলে এমন মানুষ তার কম্পিউটার সম্বন্ধে সচেতন নয়। সে এই আজব যন্ত্রের মূল্যায়ন করতে জানে না।
সাধারণ মানুষরা এই ব্রেনের মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ ব্যবহার করে থাকে। আর সফল প্রতিভাবানগণ ব্যবহার করেন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। (সাফল্যের চাবিকাঠি ২৩পৃঃ)
তােমার কাছেও আছে এমন একটি কম্পিউটার। তুমি যদি তার সঠিক মূল্যায়ন করতে পার, তাহলে তুমিও একজন বড় ধনী, সফল, বিজ্ঞানী, খ্যাতিমান ও যশস্বী ব্যক্তিরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পার।
প্রত্যেক কাজ আরম্ভ করার পূর্বে তার পশ্চাতে মানুষের কোন না কোন উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্যহীন কাজ পাগলের। তুমি যে পড়াশােনার কাজ আরম্ভ করেছ, নিশ্চয়ই তার পশ্চাতে কোন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আছে। সে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যটি কি, তা ঠিক করেছ কি?
জেনে রেখাে যে, লক্ষ্য নির্ধারিত না করলে সফলতা লাভে সন্দেহ থাকবে।
আদর্শ ছাত্র-জীবন গন্তব্যস্থল নির্দিষ্ট না হলে পথ চলতে বিরক্ত ও কষ্ট লাগবে।
লক্ষ্য ঠিক করলে অপর লােকেও তােমাকে সহযােগিতা করবে। পক্ষান্তরে লক্ষ্য স্থির না করলে কোন লােকের সহযােগিতা তুমি পাবে না।
লােকের ভিড় পার হওয়ার পর যদি তােমার লক্ষ্যবস্তু থাকে এবং লােকেরা যদি বুঝতে পারে যে, তুমি তাদের অপর পাশে পার হয়ে সেটি অর্জন করবে, তাহলে অনায়াসে তারা তােমাকে তাদের দিকে ছুটে আসতে দেখে কিছু না বলতেই রাস্তা ছেড়ে দেবে। পক্ষান্তরে যদি তােমার লক্ষ্য নির্ধারিত না থাকে, তাহলে লােকে তােমার জন্য রাস্তা ছাড়বে না। যেহেতু তারাও জানে না যে, তােমার লক্ষ্যটি কি? মােট কথা তােমার জীবনের লক্ষ্য কি? তুমি কত বড় ও কি হতে চাও? তার একটা নীল নকশা প্রস্তুত করে মনের মানসপটে এঁকে নাও। তুমি যত বড় হতে চাও, তার প্রতিচ্ছবি চিত্রিত থাক তােমার মনের পর্দায়। পরিকল্পনা বা প্ল্যানএস্টিমেট তৈরী হয়ে থাকুক তােমার হৃদয়ের কোঠাতে। মনের মুকুরে সেই ছবি বারবার দেখতে থাক, যা তুমি হতে চাও।
আর জেনে রেখাে যে, তােমার ব্রেন-কম্পিউটার সেই মনছবিকে বাস্তবে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর থাকবে। তুমি যে আশা ও পরিকল্পনা করে তােমার কাজ শুরু করেছ, তা তােমার ব্রেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে। মনছবিই তােমাকে তােমার সাফল্যের পথ বলে দেবে। অবশ্য মনছবির বাস্তবতার জন্য লক্ষ্য স্থির; সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হতে হবে। যে লক্ষ্য তুমি স্থির করেছ, তা যুক্তিযুক্ত ও সম্ভাবনাময় হতে হবে এবং তার যৌক্তিকতায় ও সম্ভাবনাময়তায় পূর্ণ আস্থা থাকতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের পথে পূর্ণ অনুভূতি ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। মনছবিই তােমাকে বলে দেবে তুমি কি করবে। সেই তােমাকে লক্ষ্যস্থলে পৌছতে অন্ধের যষ্ঠির মত কাজ করে যাবে।
মানুষের মন অনুযায়ী মহান সৃষ্টিকর্তা ফল দিয়ে থাকেন। মানুষ যে নিয়ত করে, সে নিয়ত অনুযায়ী তার কর্মের ফলাফল প্রাপ্ত হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
ومن يرد ثواب الدنيا تؤته منها ومن يرد واب الآخرة تؤته منها وسنجزي الشاكرين } (145) سورة
آل عمران
অর্থাৎ, যে কেউ পার্থিব পুরস্কার চাইবে আমি তাকে তা হতে (কিছু) প্রদান করব এবং যে কেউ পারলৌকিক পুরস্কার চাইবে আমি তাকে তা হতে প্রদান করব। আর শীঘ্রই আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করব। (সূরা আলে ইমরান ১৪৫ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন,
ومن أراد الآخرة وسعى لها سعيها وهو مؤمن فأولئك كان سعيهم مشكورا }
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাসী হয়ে পরলােক কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে, তাদেরই চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে। (সূরা ইসরা’ ১৯ আয়াত)
وأن ليس للإنسان إلا ما سعی } (۳۹) سورة النجم
ترجو النجاة ولم تسلك مسالكها إن السفينة لا تجري على اليبس
অর্থাৎ, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে। (সুরা নাজম ৩৯ আয়াত)।
মহানবী $ বলেন, মহান আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার কাছে থাকি। সে আমাকে ভালাে ধারণা করলে ভালাে পাবে। আর মন্দ ধারণা করলে মন্দ পাবে। (সহীহুল জামে' ১৯০৫নং)
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন, 'যে ব্যক্তি নিজ পরলােক সুখময় করার উদ্দেশ্যে জ্ঞান অনুসন্ধান করে সে পারলৌকিক সুখ লাভ করে। আর যে দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে ইলম শিক্ষা করে তবে সেটাই তার প্রাপ্য অংশ হয়। (পরলােক সে লাভ করতে পারে না)।' (দারেমী ১/৭০)।
বাংলা প্রবাদেও দু-একটি কথা আছে,
যা ফেলবার নয়। বলা হয়, যে যা ধায়, সে তা পায়। যে খায় চিনি, তারে যােগায় চিন্তামণি। ইত্যাদি।
এর অর্থ হল, লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করে গেলে সেই লক্ষ্য অর্জন হয়। সৃষ্টিকর্তা তার সেই আশা পূরণ করে থাকেন।
‘শিখিব পড়িব বড়লােক হব,
পর গলগ্রহ হয়ে কেন রব।
এরূপ প্রবল প্রতিজ্ঞা যার,
হন রহমান সহায় তার।'
আর এ জন্যই ইসলামে নিয়তের বড় গুরুত্ব রয়েছে। তুমিও তােমার নিয়ত ঠিক করে নাও। আশা করলে তােমার মনছবিতে বড় আশা কল্পনা কর। মাদ্রাসা, স্কুল বা কলেজের আমি সেরা ছাত্র ও সবার চেয়ে ফার্স্ট হব, বড় ব্রেনী ও কৃতিছাত্র হব, সবার চাইতে বড় আলেম হব, বড় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হব, খ্যাতিমান বড় লেখক বা বক্তা হব, বড় চাকরি পাব ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে ছােট আশা করবে না, নিজেকে ছােট ভাববে না, নিজের অযােগ্যতা স্বীকার করবে না, হীনম্মন্যতার শিকার হবে না, হিম্মত উঁচু রাখবে, আত্মবিশ্বাস রেখে নিজের প্রতি আস্থা রাখবে, তাহলেই সফল হবে। আশা বড় কর। তবে জেনে রেখাে যে, আশা করলে তিনটি কাজ করতে হয়ঃ(ক) যার আশা করা হয়, তার প্রতি গভীর ভালােবাসা ও চরম লােভ থাকতে হয়। (খ) তানা পাওয়ার আশঙ্কায় অথবা হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে মন ব্যাকুল থাকে। (গ) তা অর্জনের পথে শত চেষ্টা জারী থাকে। অন্যথা সে আশা দুরাশা। মহানবী # বলেন, “যে ব্যক্তি গভীর রাত্রিকে ভয় করে সে ব্যক্তি যেন সন্ধ্যা রাত্রেই সফর শুরু করে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যারাত্রে চলতে লাগে সে গন্তব্যস্থলে পৌছে যায়। সাবধান! আল্লাহর পণ্য বড় আক্রা। শােনাে! আল্লাহর পণ্য হল জান্নাত।” (সহীহ তিরমিযী ১৯৯৩ নং)
ترجو النجاة ولم تسلك مسالكها إن السفينة لا تجري على اليبس
পরিত্রাণ পেতে চাহ চল না সে পথে,
পানির জাহাজ কভু চলে না ডাঙ্গাতে।
পথে বাধা তাে আসতেই পারে, বাধা উল্লংঘন করে অগ্রসর হতে হবে। নদীর মত এঁকেবেঁকে হলেও তােমাকে গন্তব্যস্থল সমদ্রে গিয়ে পৌছতে হবে।
সর্বদা আশাবাদী হও, নিরাশাকে মনে স্থান দিও না। ইতিবাচক ধারণা ও কল্পনা কর। নেতিবাচক ধারণা ও কল্পনা থেকে সুদুরে থাক। খারাপ কিছু শুনলেও কুধারণা করাে না; বরং সুধারণা কর এবং অমঙ্গলের আশঙ্কা না মঙ্গলের আশা কর। অসচেতন অভিভাবক বা শিক্ষকের কোন নেতিবাচক মন্তব্য শুনে নিরাশ হয়ে যেও না। খবরদার ভাববে না, হয়তাে ফেল হয়ে যাব, হয়তাে সফল হব না, হয়তাে ফার্স্ট হতে পারব না, হয়তাে আমার ভাগ্য মন্দ, যদি চাকরি না পাই, যদি খরচ না যােগাতে পারি, হয়তাে আমার আশা পূরণ হবে না, ইত্যাদি।
ক্লাশে প্রথম হওয়ার সাথে সাথে জীবনে প্রথম হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাও। প্রত্যেক প্রতিযােগিতায় তুমিই প্রথম স্থান অধিকার করতে পারবে -এই বিশ্বাস রাখ। ভেবে দেখ, মাতৃজরায়ুতে ৪০ থেকে ৫০ কোটি শুক্রাণুর মধ্যে তুমিই প্রথম স্থান অধিকার করে ডিম্বাণুর বৃত্তের মধ্যে নিজের আশ্রয় তৈরী করে নিয়ে এ পৃথিবীর মুখ দেখতে পেয়েছ। অনুরূপ জীবন-সংগ্রামে তুমিই চেষ্টা করলে হতে পার কোটি কোটি মানুষের মাঝে অনন্য।।
আর ভীরু-কাপুরুষের মত পারব না’ বলাে না। কারণ বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘আমি পারব’ -এই দৃঢ় বিশ্বাসই সকল সাফল্যের ভিত্তি। তারা মনে করেন, ‘পারব বলে বিশ্বাস করলে তুমি অবশ্যই পারবে।
‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার।
পাঁচ জনে পারে যাহা |
তুমিও পারিবে তাহা
পারিব না বলে মুখ করিও না ভার।
একবারে না পারিলে দেখ শতবার।
পার কি না পার কর পরখ তাহার,
একবার না পারিলে দেখ শতবার।'
এক ছেলে মাদ্রাসায় পড়ত। যা পড়ত, তা মুখস্থ করতে পারত না। মুখস্থ করত আর ভুলে যেত। এতে সে মনে মনে খুব বিরক্ত হত। আফশােস করত আর দঃখিত হত। একদিন সে আক্ষেপে মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু লিখাপড়া না করলে জীবন যে বৃথা। কোথায় যাবে, কি করবে সে?
মনের দুঃখে সে বাড়ি ফিরছিল। পথে পিপাসা লাগলে একটি কুঁয়ায় পানি খেতে গেল। সে কুঁয়াতলায় একটি পাথর দেখতে পেল। দেখল, পাথরটি ক্ষয় হয়ে খাল হয়ে গেছে। কারণ বিবেচনা করে জানতে পারল, কলসির ঘসা লেগে পাথরটি ক্ষয় হয়ে গেছে। ভাবল, মাটির কলসির ঘসা লেগে যদি পাথর ক্ষয় হতে পারে, তাহলে বারবার পড়া পড়ে আমার ব্রেন ক্ষয় হবে না কেন?
এ কথা খেয়াল করে সে নতুনভাবে পড়তে শুরু করল এবং পরবর্তীতে সে বড় বিদ্বান ও পন্ডিতরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করল।
মদীশ্বর দশ-বারাে বছর পড়েও ব্যাকরণে ব্যুৎপত্তিলাভ করতে পারেননি। তখন অধ্যাপক তােমার কিছু হবে না বলে তাকে বিদায় দিলেন। মদীশ্বর মনের ক্ষোভে আত্মহত্যা করবেন এই স্থির করে এক বনের দিকে হাঁটতে লাগলেন। পথে একটি বড় পুকুর দেখে তার পানিতে ডুবে মরার জন্য পাথরবাঁধানাে ঘাটের শেষ সিড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে তিনি পাথরের উপর একটি গর্ত দেখতে পেলেন। মহিলারা পানিভর্তি কলসী সেখানে রাখত। এইরূপ রাখতে রাখতে বহু বছর পর ঐ গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি এ কথা বুঝে মনে মনে ভাবলেন, যদি আমিও বহুদিনব্যাপী চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের সাথে ব্যাকরণ পাঠ করি, তাহলে নিশ্চয় পাথর ক্ষয় হওয়ার মত আমার ব্রেনও ক্ষয় হয়ে কাজ করবে। সুতরাং তিনি ফিরে গিয়ে নতুনভাবে অধ্যবসায় শুরু করে তিনি ব্যাকরণের গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন। | অনুরূপভাবে এক ছাত্র পড়া মনে রাখতে না পারার ফলে তা ত্যাগ করার সংকল্প করার পর একদিন লক্ষ্য করল, একটি পিপড়ে একটি শস্যদানা নিয়ে একটি দেওয়ালে ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছু দূর উঠতেই সে দানাসহ পড়ে যাচ্ছে। বারবার চেষ্টার পর সেই পিপড়ে পরিশেষে সেই দানা নিয়ে নিজের গন্তব্যস্থলে পৌছতে সক্ষম হয়েছিল। তা দেখে সেই ছাত্র সংকল্পবদ্ধ হল যে, সেও অনুরূপভাবে পড়তে ও মনে রাখতে পারবে। সেও ভবিষ্যতে বড় বিদ্বানরূপে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। সূফী গাযালীর জন্য কথিত আছে যে, ছােটবেলায় তার স্মরণশক্তি অত্যন্ত দুর্বল ছিল। তাই সবকিছু তিনি খাতায় নােট করে বয়ে নিয়ে বেড়াতেন। একদা তিনি কোন মরুভূমিতে ডাকাতদলের পাল্লায় পড়লে তারা তার খাতাগুলিও তাঁর নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়। তিনি পিছনে পিছনে ছুটে তাদের কাছে তার খাতাগুলাে ফিরিয়ে দিতে অনুরােধ করেন। তিনি বলেন, তারা তার সবকিছু নিক, কিন্তু তার জ্ঞানভান্ডার যেন ফিরিয়ে দিক। এ কথা শুনে ডাকাত সর্দার বলল, যে জ্ঞান ডাকাতে ছিনিয়ে নিতে পারে, সে জ্ঞান দিয়ে কি হবে? ডাকাতের এ কথা তার মনে সুগভীর দাগ কাটে এবং তারপর থেকে তিনি আর খাতার উপর ভরসা না করে স্মৃতিশক্তির উপর ভরসা করেন। ফলে পরবর্তীতে তিনি উচ্চমানের স্মৃতিশক্তির অধিকারী হন।
জ্ঞানীদের পরিশ্রমের কথা স্মরণ রাখতে হবে এবং তােমাকেও তাদের মত পরিশ্রম করতে হবে। নচেৎ, উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ?’
জেনে রাখ যে, মানুষের মনবলই হল প্রকৃত বল। এই মনের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় কোন কিছুর ইচ্ছা, আশা, ভরসা, উৎসাহ, প্রেরণা, সাহস, স্পৃহা ও প্রতিজ্ঞা।
'তীর তারা উল্কা বায়ু শীঘ্রগামী যেবা,
মনের অগ্রেতে বল যেতে পারে কেবা?’
সুতরাং মনােবলের মত অন্য বল তােমার শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে সহযােগিতা করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বল বল বাহুবল, জল জল বৃষ্টির জল’ কথাটি ঠিক নয়। বরং এ ক্ষেত্রে বল বল মনােবল, জল জল যমযমের জল।' কথাই ঠিক। | যেহেত মনােবল থাকলে তুমি সফল হবে এবং যমযমের পানি যে নিয়তে পান করবে, সেই নিয়ত তােমার পূরণ হবে।
এই সংসার সুখের কুটী,
যার যেমন মন তেমি ধন,
মনকে কর পরিপাটী।
(৩) মনােযােগ দাও।
অধ্যয়নের সময় গভীর মনােযােগী হতে হবে, একাগ্রচিত্তে অধ্যয়ন করতে হবে এবং আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পড়তে ও শুনতে হবে। নচেৎ পড়ার সময় দ্বিমনা বা অন্যমনস্ক হলে পড়াটি মুখস্থ হবে না এবং মনে থাকবে না।
একদিকে টেবিলের সামনে বসে বই পড়বে, অন্য দিকে মনে মনে হরেক রকমের চিন্তা-ভাবনা করবে, এতে কোন লাভ হবে না।
পড়ার সময় মনােযােগ দিয়ে পড়। শিক্ষকের ব্যাখ্যা মনােযােগ দিয়ে শােন। কোন বিষয় জানা থাকলেও না জানার ভান করে গভীর মনােনিবেশের সাথে শ্রবণ কর।
মহান আল্লাহ নিজের বাণী কুরআন মনােযােগ সহকারে শুনতে আদেশ করেছেন। শােনার কানের সাথে মনের যােগ না দিলে শােনা বিষয় মনভূমিতে বদ্ধমূল হবে না। শােনার বীজ মনের মাটিতে সঠিকভাবে রােপিত না হলে, সােনার ফসল ফলবে কিভাবে? মহান আল্লাহ বলেন,
{ إن في ذلك لذكرى لمن كان له قلب أو ألقى السمع وهو شهيد } |
অর্থাৎ, এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য যার আছে অন্তঃকরণ অথবা যে শ্রবণ করে নিবিষ্ট চিত্তে। (সুরা ক্বাফ ৩৭ আয়াত)
‘বই পড়ে কিন্তু যে নাহি দেয় মন,
কেমনে সেজন বল, পাবে জ্ঞান-ধন?
প্রদীপে না দিয়ে তেল বাতি যদি জ্বালাে,
কখনাে কি সে প্রদীপ দিয়ে থাকে আলাে?’