বিসিএস কি?সিভিল সার্ভিস বলতে কী বোঝায়?
বিসিএস এর পূর্ণরূপ হল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। মানুষের কিছু মৌলিক চাহিদা রয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষমতা পাগল। কেউ সম্মানের পাগল। কেউ ভালো জীবনযাপনের জন্য পাগল। বিসিএস আপনাকে সম্মান, ক্ষমতা, অর্থ এবং সামাজিক মর্যাদা এনে দেবে। প্রশাসনিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে একজন বিসিএস ক্যাডার সমসাময়িক সবার উপরে। তাই ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনার্স পাস করে বিসিএসের পেছনে ছুটছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তারা পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে না জেনেই বিসিএস পরীক্ষার পরে তাড়াহুড়ো করে। সুতরাং, আজকের টিউটোরিয়ালে, আপনি সম্পূর্ণ বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিখবেন।
বিসিএস কি?
বিসিএস হল একটি পরীক্ষার নাম এবং সরকারি প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদানের জন্য একজনকে এই পরীক্ষাটি পাস করতে হবে।
সিভিল সার্ভিস বলতে কী বোঝায়?
প্রতিটি দেশে দুই ধরনের সরকারি চাকরি আছে। একটি সামরিক এবং অন্যটি বেসামরিক। মিলিটারি মানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী। সিভিল মানে প্রশাসন, পুলিশ, ট্যাক্স, পররাষ্ট্র, নিরীক্ষা ইত্যাদি।
বিসিএস ক্যাডার বলতে কী বোঝায়?
একটি ক্যাডার হল একটি নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য প্রশিক্ষিত একটি দল। নির্দিষ্ট কাজ মানে সরকারি আদেশ, নিষেধাজ্ঞা, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। সরকারি চাকরিতে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগপ্রাপ্তদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাই তাদের বলা হয় সিভিল সার্ভিস ক্যাডার।
একজন বিসিএস ক্যাডার একজন প্রজাতন্ত্রের সেবক। জনগণের সেবক। বিসিএস ক্যাডার মূলত দুই ধরনের। সাধারণ (পুলিশ, প্রশাসন, বহিরাগত বিষয়, ইত্যাদি) এবং প্রযুক্তিগত (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, রাস্তা এবং নগর উন্নয়ন ইত্যাদি)।
এছাড়া যে কেউ যেকোনো বিষয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাধারণ ক্যাডারে চাকরি পেতে পারলেও কারিগরি ক্যাডারে চাকরি পেতে হলে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ সরকারী ডাক্তার হিসাবে কাজ করতে পারে না।
বিসিএস ক্যাডারের প্রকারভেদ
সাধারণত, বাংলাদেশে বর্তমানে ২৭ ধরনের ক্যাডার রয়েছে। বিপিএসসি (বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন) বিসিএস পরীক্ষা পরিচালনা করে। এই পরীক্ষাটি শুধু বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা নয়। সারা পৃথিবীতে এত কঠিন পরীক্ষা আর নেই।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। 2021 সালে, 40,247 জন ছাত্র হার্ভার্ডে আবেদন করেছিল। ২ হাজার ৫১ জন পরীক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছেন এবং ১টি আসনে লড়েছেন ১৯ জন শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার শিক্ষার্থী। আসন সংখ্যা দুই হাজার। এখানে প্রতি আসনে লড়েছেন ২৩৬ জন!
বিসিএস ক্যাডারের সুবিধা
- এত প্রতিযোগিতার পরও কেন বিসিএস শিক্ষার্থীরা এত আগ্রহী? বিসিএস ক্যাডারদের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে যা বিসিএসকে অন্য চাকরির থেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
- রয়েছে স্থায়ী চাকরির নিরাপত্তা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলে চাকরি হারাবেন না। 99% মামলা স্থানান্তরিত হয়, তাদের বেশিরভাগই পদত্যাগ করা হয়।
- এ ছাড়া চাকরির শুরুতেই ভালো বেতন পাওয়া যায়। একজন ক্যাডারের বেতন জাতীয় 9ম গ্রেড পে স্কেলে শুরু হয়। বেসিক 22,000 BDT থেকে শুরু। চাকরির শুরুতেই 1,100 টাকার ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়। আবার সেই কারিগরি ক্যাডাররা (ডাক্তার, শিক্ষাবিদ ইত্যাদি) অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পান।
- সরকার শিশুদের জন্য মাসিক শিক্ষা ভাতা প্রদান করে। প্রতি সন্তানের জন্য 500 টাকা মাসিক ভাতা পাওয়া যায়।
- বাসস্থান, যোগাযোগ ভাতা, টিফিন ভাতা সহ বিভিন্ন ভাতা পাওয়া যায়।
- যে কোনো ক্যাডারই সমাজের অন্য যেকোনো কর্মীর চেয়ে বেশি মূল্যবান।
- বিশেষ ক্ষেত্রে ৫ বছর পর্যন্ত অধ্যয়ন ছুটি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
- সেবা শেষে বিশাল পেনশন পাওয়া যায়। বাকি জীবন পেনশনের টাকায় আরামে কাটে।
- সর্বোপরি সমাজ ও দেশের জন্য সামনে থেকে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
- BPSC কিভাবে BCS ক্যাডার নিয়োগ করে?
- তাছাড়া এই পরীক্ষাটিও বেশ জটিল। বিসিএস ক্যাডার হতে হলে আপনাকে ৩টি বড় ধাপ অতিক্রম করতে হবে।
ধাপ 1:
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: প্রথমে 10টি বিষয় থেকে মোট 200 নম্বর নেওয়া হয়েছিল। সময় 2 ঘন্টা। প্রার্থীদের শুধুমাত্র এই পরীক্ষায় নির্বাচিত করা হয়। লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার সাথে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর গণনা করা হয় না। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা MCQ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়।
ধাপ ২:
লিখিত পরীক্ষা: দ্বিতীয়ত, 900 নম্বরের জন্য লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই 900 মার্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ. গড় পাস মার্ক 50%। যারা এই পরীক্ষাটি পাস করেন তাদের ভাইভা পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়।
ধাপ 3:
ভাইভা পরীক্ষা: অবশেষে, ভাইভা পরীক্ষায় 200 নম্বর থাকে এবং পাসের নম্বর 50%। ভাইভা বোর্ড একজন চেয়ারম্যান এবং একজন বোর্ড সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। ভাইভাতে, একাডেমিক পড়াশোনা, দেশ, সমাজ এবং রাজনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভা পরীক্ষার মোট সংখ্যা অর্থাৎ 900 + 200 = 1100 নম্বরের ভিত্তিতে একজন প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করে। এই সমস্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে বিসিএস সিলেবাস এবং বিতরণ ভালভাবে জেনে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা উচিত।