বাংলা ভাষার সংজ্ঞা/সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য(nine ten)
ভাষার সংজ্ঞা
মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য কণ্ঠধ্বনি এবং
হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে।
কণ্ঠধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনােভাব প্রকাশ করতে পারে,
ইঙ্গিতের সাহায্যে ততটা পারে না। আর কণ্ঠধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের
সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবও প্রকাশ করতে সমর্থ হয়। কণ্ঠধ্বনি বলতে মুখগহ্বর,
কণ্ঠ, নাক ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বােধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বােঝায়।
এই ধ্বনিই ভাষার মূল উপাদান। এই ধ্বনির সাহায্যে ভাষার সৃষ্টি হয়। আবার ধ্বনির
সৃষ্টি হয় বাদ্যযন্ত্রের দ্বারা। গলনালি, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, নাক ইত্যাদি বা
প্রত্যাকে এক কথায় বলে বাগযন্ত্র। এই বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবােধক ধ্বনির
সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে।।
সকল মানুষের ভাষাই বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট। তবুও একই ধ্বনি বা
ধ্বনিসমষ্টির অর্থ বিভিন্ন মানবগােষ্ঠীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
এ কারণে বিভিন্ন মানবগােষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে।
মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত বাক্ সংকেতের সংগঠনকে ভাষা বলা হয়।
মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হলাে ভাষা।
দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থান করে মানুষ আপন মনােভাব প্রকাশের
উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বস্তু ও ভাবের জন্য বিভিন্ন ধ্বনির সাহায্যে শব্দের সৃষ্টি করেছে।
সেসব শব্দ মূলত নির্দিষ্ট পরিবেশে মানুষের বস্তু ও ভাবের প্রতীক (Symbol) মাত্র।
এ জন্যই আমরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই।
সে ভাষাও আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়ে এসেছে।
ফলে, এ শতকে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে যে ভাষা ব্যবহার করে,
হাজার বছর আগেকার মানুষের ভাষা ঠিক এমনটি ছিল না।
বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত আছে।
তার মধ্যে বাংলা একটি ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে
বাংলা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ মাতৃভাষা।
বাংলাদেশের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাদেশের ছাড়াও
পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ এবং ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের
কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের ভাষা বাংলা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ
বিশ্বের অনেক দেশে বাংলা ভাষাভাষী জনগণ রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে
প্রায় ত্রিশ কোটি লােকের মুখের ভাষা বাংলা।
বাংলা ভাষারীতি কথ্য, চলিত ও সাধু রীতি বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
অঞ্চলের জনগণ নিজ নিজ অঞ্চলের ভাষায় কথা বলে।
এগুলাে আঞ্চলিক কথ্য ভাষা বা উপভাষা। পৃথিবীর সব ভাষায়ই উপভাষা আছে।
এক অঞ্চলের জনগণের মুখের ভাষার সঙ্গে অপর অঞ্চলের জনগণের মুখের
ভাষার যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। ফলে এমন হয় যে, এক অঞ্চলের ভাষা অন্য
অঞ্চলের লােকের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, চট্টগ্রাম
অঞ্চলের সাধারণের কথ্য ভাষা দিনাজপুর বা রংপুরের লােকের পক্ষে খুব সহজবােধ্য নয়।
এ ধরনের আঞ্চলিক ভাষাকে বলার ও লেখার ভাষা হিসেবে সর্বজনীন
স্বীকৃতি দেওয়া সুবিধাজনক নয়। কারণ, তাতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাভাষীদের
মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে অন্তরায় দেখা দিতে পারে। সে কারণে, দেশের শিক্ষিত
ও পণ্ডিতসমাজ একটি আদর্শ ভাষা ব্যবহার করেন। বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষিত জনগণ
এ আদর্শ ভাষাতেই পারস্পরিক আলাপ-আলােচনা ও ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন।
বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষার কথ্য রীতি সমন্বয়ে শিষ্টজনের ব্যবহৃত এই
ভাষাই আদর্শ চলিত ভাষা। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, হিন্দি প্রভৃতি ভাষার
মৌখিক বা কথ্য এবং লৈখিক বা লেখ্য এই দুটি রূপ দেখা যায়।
ভাষার মৌখিক রূপের আবার রয়েছে একাধিক রীতি :
একটি চলিত কথ্য রীতি অপরটি আঞ্চলিক কথ্য রীতি।
বাংলা ভাষার লৈখিক বা লেখ্য রূপেরও রয়েছে দুটি রীতি :
একটি চলিত রীতি অপরটি সাধু রীতি।
সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য
১. সাধু রীতি
(ক) বাংলা লেখ্য সাধু রীতি সুনির্ধারিত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করে চলে
এবং এর পদবিন্যাস | সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট।
(খ) এ রীতি গুরুগম্ভীর ও তৎসম শব্দবহুল।
(গ) সাধু রীতি নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার অনুপযােগী।
(ঘ) এ রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক বিশেষ গঠনপদ্ধতি মেনে চলে।
২. চলিত রীতি
(ক) চলিত রীতি পরিবর্তনশীল। একশ বছর আগে যে চলিত রীতি সে
যুগের শিষ্ট ও ভদ্রজনের কথিত
ভাষা বা মুখের বুলি হিসেবে প্রচলিত ছিল, কালের প্রবাহে
বর্তমানে তা অনেকটা পরিবর্তিত রূপ লাভ করেছে।
(খ) এ রীতি তদ্ভব শব্দবহুল।
(গ) চলিত রীতি সংক্ষিপ্ত ও সহজবােধ্য এবং বক্তৃতা, আলাপ-আলােচনা ও
নাট্যসংলাপের জন্য বেশি উপযােগী।
(ঘ) সাধু রীতিতে ব্যবহৃত সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ চলিত রীতিতে পরিবর্তিত
ও সহজতর রূপ লাভ করে। বহু বিশেষ্য ও বিশেষণের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে।
৩. আঞ্চলিক কথ্য রীতি সব ভাষারই আঞ্চলিক রূপের বৈচিত্র্য থাকে,
বাংলা ভাষারও তা আছে। বিভিন্ন অঞ্চলে কথিত রীতির বিভিন্নতা লক্ষিত হয়;
আবার কোথাও কোথাও কারাে কারাে উচ্চারণে বিভিন্ন অঞ্চলের
ভাষার মিশ্রণও লক্ষ্য করা যায়।
সাধু, চলিত ও কথ্য রীতির উদাহরণ
ক. সাধু রীতি
পরদিন প্রাতে হেডমাস্টার সাহেবের প্রস্তুত লিস্ট অনুসারে যে তিনজন
শিক্ষক সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন,
তাঁহারা আটটার পূর্বেই ডাক-বাঙ্গায় উপস্থিত হইলেন। একটু পরে
আবদুল্লাহ আসিয়া হাজির হইল। তাহাকে দেখিয়া একজন শিক্ষক
জিজ্ঞাসা করিলেন- আপনি যে! আপনার নাম তাে হেডমাস্টার লিস্টে দেন নাই।
খ. চলিত রীতি
পুল পেরিয়ে সামনে একটা বাঁশ বাগান পড়ল।
তারি মধ্য দিয়ে রাস্তা। মচমচ করে শুকনাে বাশ পাতার রাশ ও বাশের খােসা
জুতাের নিচে ভেঙে যেতে লাগল। পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় বুনাে
গাছপালা লতা ঝােপের ঘন সমাবেশ। সমস্ত ঝােপটার মাথা জুড়ে
সাদা সাদা তুলাের মতাে রাধালতার ফুল ফুটে রয়েছে।
Nice Vai ai vabei post Kore amader upokar Koren
Onek kicu janlam
wow osadharon